কি আছে নারীর স্তনে? যার জন্য পাগল পুরো পৃথিবীর পুরুষ

0
155
views

শৈশবে আমি বেশ মোটাসোটা ছিলাম আর সেকারণেই হয়তোবা খুব দ্রুত আমা’র স্তনের আকার বেড়েছিল। প্রথমে আমা’র ফ্রকের সামনে কুচি কুচি দেয়া কাপড় জুড়ে দেয়া হলো, তারপর আমাকে ব্রা পরতে হল। তখনকার

সময়ে এই পোশাকটি পরতে বেশবির’ক্তিকরই লাগতো। তবে ব্রা পরতে চাওয়া বা না চাওয়ার চেয়ে বড় চিন্তার বি’ষয় ছিল এই শংকা যে ‘স্তনের আকার নষ্ট হয়ে যাব’ে’। মা খালা, চাচী, মামীরা কানের কাছে

ফিসফিসিয়ে জানিয়ে যেত এ কথা। কিন্তু কোন আকার? ছোট্ট মনে প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আতংক বাড়তো।স্তনের আকারের উপর ভালো বর জোটে। স্তনের আকার পরিবর্তনে নষ্ট মেয়ের খেতাব জোটে! আমা’দের সমাজে

এই ধরনের কথাও এখনো প্রচলিত। ছোট বেলায় খেলতে যেতে আমা’র এক সহপাঠির বুকে এক ছেলের হাত লেগেছিল অথবা ছেলেটি মেয়েটির স্তন চেপে ধরেছিল, মেয়েটি আতংকিত হয়ে ঘটনাটা আমা’র সাথে শেয়ার

করে বলেছিল, ‘এখন কি আমা’র দুধ বড় হয়ে হয়ে যাব’ে? লোকজন ভাববে আমি খারাপ কাজ করি?’‘রাস্তাঘাট হাটবাজারে ভিড়ের ভেতর অজস্র পুরুষের হাত অক্টোপাস হয়ে জড়িয়ে ধরে, লাঞ্ছিত করে হাজার হাজার

শিশু, কিশোরী, তরুণী এমনকি মধ্যবয়সী নারীর স্তন।‘মেয়েটার বুক পিঠ সমান’, ‘কিসসু নাই’ অথবা ‘ওরে বড় দুধ’। ‘রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে স্তন ছোট ও বড় মেয়েদের এমন কথা অহরহই শুনতে হয়। যে দেশের

পুরুষরা নারীদের সুন্দর আর পাতলা দেখতে চায় সেখানে বক্ষহীন নারীকে কটু কথা শোনায়, ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত!আমা’র স্তন ছোট না বড়, টানটান না ঝোলা সেটা তো একান্তই আমা’র ব্যাপার হওয়ার কথা, তাই না?

এটা তো আমা’র শরীরেরই অংগ, আমা’র স্তনের আকার কিংবা আদৌ এর অস্তিত্ব থাকবে কিনা, সেই বিধান ঠিক করে দেবার অধিকার অন্যকে কে দিয়েছে?

পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতিকে নিজের অ’ভিজ্ঞতা তুলে ধরে শ্রীমুয়ি পিউ কুন্ডু লিখেছেন, ‘আদতে আমা’দের স্তন কখনোই আমা’দের নিজেদের নয়। বাস্তবিক অর্থে এটি হল পবিত্রতা, পাপ কিংবা লজ্জ্বা’র উৎস। আমা’র স্তন

প্রস’ঙ্গে সবসময় মায়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, বাবা কিংবা ভাইদের সামনে যাওয়ার সময় আমাকে ব্রা পরতে হয়। জনবহুল এলাকায় কিংবা বাসে চলাফেরার সময় পুরুষের স’ন্ত্’রাসী কর্মকাণ্ড থেকে স্তনগু’লোকে

বাঁচিয়ে রাখতে হয়। আমা’র সব প্রেমীরাও আমা’র স্তনের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমি কল্পনা করি, আমা’র যখন বাচ্চা হবে, তাকে কোলে নিয়ে স্তন্যদান করব, তখন তা দাগে দাগে ভরে যাব’ে। কিন্তু আমা’র

কিচ্ছু মনে হবে না। নারীদের স্তন কী কেবলই পুরুষদের প্রয়োজনীয়তা এবং আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য?’

বিতর্ক চলতে থাকে, স্তনের উপর কার অধিকার বেশি, স্বামী না সন্তানের? কী অদ্ভুত! স্তন আমা’র সেখানে আমা’র অধিকার নেই এবং স্তন নিয়ে নিয়ে আমা’র চিন্তা না থাকলেও জগতজোড়া মানুষের চিন্তার শেষ নেই!

স্তন ছোট-বড়, টানটান-ঝোলা-এই পার্থক্যগু’লো, এই বৈশিষ্ট্যগু’লো সব নারীর মাঝেই বিদ্যমান, দুর্লভ কিছু নয়। অথচ এই নিয়েই সে কী উত্তেজনা; জগৎজোড়া এই ভেবেই হয় লখো-কোটি ডলারের প’র্নো বাণিজ্য,

বাজারে বিকোয় কত বাহারি বক্ষবন্ধনী। এর জোরেই কারো ‘ভালো’ বর জোটে, কারো বিয়ে হয় না।পৃথিবীতে ছয়শ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক নারী। তিনশ কোটি নারীর ছয়শ কোটি স্তন। বি’ষয়টা আমা’দের সবার জন্যই

তাই খুব স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ, দুর্লভ জিনিসের প্রতিই নাকি মানুষের টান, আর সে হিসাবে নারীর স্তন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কিন্তু দুর্লভ নয়। অথচ স্তন শব্দটা আজও যেন রহস্যময়। ভয়, ল’জ্জা,

উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা তৈরি হয় এই শব্দটাতেই। পুরুষত্বের জন্য তো বটেই, নারীর জন্যও এ এক অন্য জগৎ।

একবিংশ শতকের আধুনিকতার সময়ে স্তন নিয়ে আমা’দের এই মাতামাতি যেন প্রমাণ করে দেয়, পুঁজিবাদের এই স্বর্ণযুগে নারীর স্তন নিয়ে এই উত্তেজনা বাণিজ্য বিকৃতি ছাড়া কিছু নয়। এই উত্তেজনা রোমান্টিকতা নয়, কদর্য বাণিজ্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here